Skip to main content

কবরের আযাব লেখক মুক্তারুল ইসলাম মুক্তার

কবরের আযাব 
লেখক মুক্তারুল ইসলাম মুক্তার 
সময় 8:48 রাত 
28.03.2022




আমাদের বাসা থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটা পার্ক ছিল। পার্কের সাথেই ছিল একটা সুন্দর খেলার মাঠ। আমি ও আমার বন্ধুরা সবাই মিলে বিকাল বেলা খেলা করতাম, সেখানে বসে অনেক আড্ডা দিতাম গল্প করতাম। এভাবেই সময় পার করতাম। পার্কের সাইডে একটা বাড়ি ছিল। বাড়িটা ছিল বেশ ঝকঝকে ইট পাটকেলের তৈরি। বাড়িতে কোন ছেলে মানুষ ছিল না । মা ও মেয়ে বাস করতো। মেয়েটির বাবা মারা যাওয়ার পর তাদেরকে দেখাশুনা করার মতো আর কেউ নেই।  মাও প্রায় অসুস্থ, বয়স হয়েছে তো তাই। মেয়েটা অনেক সুন্দরী, দেখতে ধপধপে সাদা বকের মতো। অনেকেই তাকে পুতুল মনে করে, পুতুল নামে ডাকতো। সে তার বাবা মায়ের একমাত্র আদরের সন্তান ছিল। আর কোন সন্তান ছিল না বলে যা ইচ্ছে তাই করতো কিন্তু খুব বেশি কিছু করতে পারতো না পারিবারিক নিয়মের জন্য । সে তার বাবার মৃত্যুর পর যেন স্বাধীন হয়ে যায়। মনে করে এখন বাধা দেওয়ার মতো আর কেউ নেই, এখন সে মুক্ত। সে যেন খাঁচায় বন্দী থাকা পাখির মতো ছিল, খাঁচার বন্দী পাখি যেমন মুক্ত হবার পর আকাশ পানে উড়িয়ে চলে যতদূর তার মন চায়। ঠিক তেমনই মেয়েটি যখন যেখানে খুশি তখন সেখানে যায় অর্থাৎ যা মন চায় তাই সে করে। ঠিক বছর খানেক যেতে না যেতেই তার মাও চলে যায় পরপারে তার বাবার কাছে। সে একা হয়ে যায়। তার মনে দুঃখ গুলো জমাট বাঁধতে শুরু করে, কিছু দিন পর সে সব ভুলে যেতে শুরু করে।  তার আর এসব কিছু মনে পড়ে না। সে বিভিন্ন ধরনের নাচ গান আড্ডা পার্টিতে যোগ দান করে। বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে মেলা মেশা শুরু করে দেয়। সে আস্তে আস্তে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়।  নিত্য তার বাড়িতে আসা যাওয়া করে বিভিন্ন ধনীক শ্রেণীর মানুষ।  মনে হয় সে যেন একটা বাজার খুলে বসে আছে। প্রতিদিনই মানুষ সেখানে আসে সদাই করার জন্য। ধীরে ধীরে সে পতিতালয়ের মেয়েদের মত হয়ে যায় এবং বেশ্যার খাতায় নাম লেখায়। এভাবে প্রতিনিয়ত চলে তার দেহ ব্যবসা। সে প্রতিনিয়তই নিজেকে বিক্রি করে টাকার জন্য। সে দেহ ব্যবসা করে প্রচুর টাকা কামাই তার যেন কোন কিছুর কমতি নেই, ধন সম্পদে ভরপুর । সে যেন তার মৃত বাবা মার কথা ভুলে গেছে। তাদের কথা তার আর একবার ও মনে পড়ে।  মারা যাওয়ার সময় সে কষ্ট পেলেও পরে ভুলে যায়। মৃত্যুর কথা তার যেন স্মরণ হয় না। মনে করে এই পৃথিবীতে আজীবন বাঁচবে এমন ভাবে চলাফেরা করে কাউকে যেন পাত্তাই দেয় না। তার মনে আল্লাহ ভীতি আছে বলে আমার মনে হয় না।  মনে হয় আল্লাহ পাক তার হৃদয়ে মহর মেরেছেন। তাকে অপকর্ম সম্পর্কে শয়তান যেন আরও উৎসাহিত করে।  সে তার কাজের মধ্যে যেমন আনন্দ পায় তেমনি অনেক টাকাও রোজগার করে।  তার কাছে মনে হয় এটাই সব থেকে টাকা কামানোর সহজ উপায়। আল্লাহ পাক বলেছেন তোমরা যে কাজ করতে চাও আমি তোমাদের কে সেই কাজ করার শক্তি সামর্থ্য দিয়ে থাকি।  তুমি যদি দুনিয়াতে ভালো কাজ করার ইচ্ছা পোষণ কর আমি সেটাই করার তৌফিক দান করি।  আর যদি খারাপ কাজ করতে চাও তাহলে আমি তোমাকে সেই কাজের শক্তি দিয়ে থাকি। আর কিছু লোকের হৃদয়ে আল্লাহ তা'য়ালা এমন করে পেরেক মেরেছেন, তাদেরকে হাজার বছর কিংবা দিনরাত ধরে বুঝলেও কোন কাজ হবে না।  আল্লাহ বলেন, আমি যাকে হেদায়েত দান করি সেই হেদায়েত প্রাপ্ত হয়। ঠিক মেয়েটিকেও লোকজন অনেক বুঝায় কিন্তু সে মানুষের কথায় কোন তোয়াক্কা না করে নিজের মতো করেই চলতে থাকে। তাকে মৃত্যুর পর কবরে কতো আযাব এ সম্পর্কে বললে সে যেন তা হেসে খেলে উড়িয়ে দেয়। নিজের যা ইচ্ছা তাই করে, সে লোকের কথায় কোন কর্ণপাত করে না। এইভাবে চলতে থাকে তার সব অপকর্ম। হঠাৎ করেই একদিন মেয়েটির মৃত্যু হবে সে তা কখনোই কল্পনা করতে পারিনি। মেয়েটির মৃত্যুতে পাড়ার সবাই খুশি হলো আর সবাই বলাবলি করতে লাগলো এবার কি হবে, এখন বুঝতে পারবি ঠেলা মজা কাকে বলে।  লোকজন কত বারণ করেছিল কারো কথায় সে শুনতো না। গ্রামের লোকজন চিন্তিত হয়ে পড়লো কে দিবে তাকে কবর আর কেবাই করবে তার জানাযা।  এ নিয়ে যেন সমাজের মধ্যে একটা গুঞ্জন উঠিল।  কিন্তু যদি তাকে কবর দেওয়া না হয় তাহলে তো লাশ পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াবে, তখন তো আর এলাকায় কেউ থাকতে পারবে না। তাই অবশেষে গ্রামের লোকেরা সিদ্ধান্ত নিলো কবর দেওয়ার জন্য, পার্কের সাথেই সরকারি কবরস্থানে তার দাফন কাফন সম্পূর্ণ করে সবাই চলে আসলো। তার অপকর্মের কামানো সব টাকা বাড়ি গাড়ি সবই পড়ে থাকলো কিছুই সে সাথে নিয়ে যেতে পারলো না।  তার সাথে শুধু কাপনের কাপড় ছাড়া কিছুই থাকল না । তার এসব সম্পত্তি ভোগ করার মতো ও আর কেউ নেই।  মিছে মায়ার পৃথিবীতে সবই যে মিছে জেনেও যেন বুঝার চেষ্টা করতো না। মৃত্যুর পর তার যেন আপসোস করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কবরে তার কঠিন আযাব শুরু হলো সে যেন চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো আর আমাকে বাঁচাও বাঁচাও বলে সে জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকে । সে যত জোরে চিৎকার করে তার আযাব যেন আর ও বাড়তে থাকে। কবরের ভিতর তার একের পর এক আযাব হতে থাকে সেই আযাব যেন সে সহ্য করতে পারছে। পার্কের পাশেই ছিল কবর স্থান, যেই কবর স্থানে তাকে কবর দেওয়া হয়েছিল। পরের দিন বিকাল বেলা আমি ও আমার বন্ধুরা মিলে পার্কে খেলা করতেছিলাম । হঠাৎ করেই আমি শুনতে পাই এক ভয়ানক আওয়াজ কেউ যেন চিৎকার করে ডাকছে আমাকে বাঁচাও আমাকে বাঁচাও বাঁচাও বলে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।  হে আমার গ্রামবাসী তোমরা আমাকে সাহায্য কর  আমি যে আর সইতে পারছি না। কেউ  কি আছো আমাকে সাহায্য করার মতো, তোমরা কেউ কি আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছ না । হঠাৎ এমন আওয়াজ শুনে আমার বুক যেন ধর পর করে উঠল। আহ! কবরের কি ভয়ানক আযাব সে যদি গ্রাম বাসীর কথা শুনতো আর মানতো তাহলে এমন হতো না।  ঐখানে তাকে সহযোগিতা করার মতো যে কেউ নেই।  

Comments

Popular posts from this blog

জুনিয়ারের প্রেম | সিনিয়র সাথে জুনিয়ারের প্রেম 2020

জুনিয়ারের প্রেম        মো : মুক্তারুল ইসলাম মুক্তার    তুমি তো অনেক বড়                   মস্ত বড় একজন।     আমি তো ছোট                   অতি নগণ্য একজন।    তবুও তোমায় লাগে ভাল                   বুঝি না কোন সে কারণ।    অবুঝ মন আমার                   বোঝতে চাই না ।   কোন ছোট বড়।                   তা ই তো হারিয়ে যায়    কোন সিনিয়রের জন্য,                  ব্যাকুল হয়ে উঠে পাবার জন্য।    তুমি তো মস্ত বড় শিক্ষক                  আমি তো অতি নগণ্য লেখক।    তুমি তো মাস্টার্স কম্পিলিট স্টুডেন্ট                   আমি ...

ফুল তুলিতে আসো - এসএম. মুক্তার সরকার

বালিকা তুমি ফুল তুলিতে আসো, নাকি ফুল তোলার ছলনায় আমায় দেখতে আসো।  জানি তোমার চালাকি, ফুল তুলিতে বাঁকা চোখে  আরে আরে আমার পানে চেয়ে থাক তুমি।  ফুল ফোটে গাছেতে মুখ তোমার ফোটে না। 

আখি ভরা নয়ন - মুক্তারুল ইসলাম মুক্তার সরকার

  আঁখি ভরা নয়নে দেখি না আর তোমাকে  গিয়াছো তুমি ভুলিয়া আমাকে, মনে তো রাখনি মোরে।