মাটির নিচে তৈরি অদৃশ্য গাইবান্ধার ফ্রেন্ডশিপ কমপ্লেক্স ভবন, স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নজির।
একাধিক ব্লকে বিভক্ত একটি ভবন। তাতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, লাইব্রেরি, অভ্যন্তরীণ খেলাধুলা ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। একটির সঙ্গে আরেকটি সংযুক্ত বারান্দা ও খোলা প্যাভিলিয়ন দিয়ে। বিশাল ভবন। কিন্তু পুরো ভবনটিই দৃষ্টির আড়ালে। পাশ দিয়ে চলে গেছে গ্রাম্য সড়ক। অথচ সেখানে দাঁড়িয়ে ভবনটি চোখেই পড়বে না। কারণ, পুরো ভবনটি মাটির তলায়।ভবনের বিভিন্ন কক্ষের ছাদ মাটির সমতলে। তাতে লাগানো সবুজ ঘাস মিশে গেছে আশপাশের মাঠের সঙ্গে। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়া গ্রামে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার নামক এই ভবনের দিকে সবাই অবাক হয়ে তাকায়। প্রকৃতির মধ্যে মিশে যেন অদৃশ্য হয়ে আছে কমপ্লেক্সটি।
গাইবান্ধা-বালাসী সড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই ভবনের আয়তন ৩২ হাজার বর্গফুট। স্থানীয়ভাবে তৈরি ইটের গাঁথুনি দিয়ে নির্মিত ভবনটি দেখতে প্রতিদিনই কৌতূহলী মানুষের ভিড় জমে।
আধুনিক ও চৌকস স্থাপত্যশৈলীর এই ভবন সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের (একেডিএন) পুরস্কারের জন্য বিশ্বের ৩৮৪টি স্থাপনাকে পেছনে ফেলে সেরা ১৯ স্থাপনার তালিকায় রয়েছে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার। এটির স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী।
ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার সম্পর্কে বলতে গিয়ে স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বল্প বাজেটে প্রকল্পটি নির্মাণের চিন্তা ছিল। কম খরচের চিন্তা আর চাপের কারণে চমৎকার এই সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে।’ এই ভবনের অনুপ্রেরণা বৌদ্ধবিহারের ধারণা থেকে এসেছে বলে জানালেন তিনি। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের ভবনটি ওপর দিক থেকে দেখলে মহাস্থানগড়ের প্রাচীন বৌদ্ধবিহারের ছবি ফুটে ওঠে অনেকটা।
ভবনের বিশেষত্ব জানতে চাইলে তরুণ এই স্থপতি বলেন, ‘ভবনের জমি খুবই নিচু ছিল। পানি আটকাতে চারদিকে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ভবনের ছাদের লেভেল রাস্তার প্রায় সমতলে। আমার লক্ষ্য ছিল অল্প খরচে সবার জন্য ভিন্নধর্মী কিছু একটা করা। এটি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়। সংস্থাটি চরের মানুষের জন্য কাজ করে। সেখানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি চরের মানুষজনের জন্য সেবা দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। তাই সেখানে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিদেশি দাতা সংস্থার লোকজন আসবেন, থাকবেন—সেটাও একটি বিষয়। সবাই যাতে ভবনে স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করতে পারেন, সেটাও মাথায় রাখতে হয়েছে।’
কাশেফ মাহবুব চৌধুরী জানালেন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে এটা ব্যবহৃত হবে জেনে নিরিবিলি ও শান্ত একটি পরিবেশ তৈরির বিষয়টি ভাবা হয়েছে। পর্যাপ্ত আলো আর বাতাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে দেশি উপকরণ।
ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের সহকারী ব্যবস্থাপক লোকমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মাটির নিচে ভবনের কক্ষ অনেকটা ঠান্ডা থাকে। বাইরের আলো-বাতাসও পাওয়া যায়। এটি পরিবেশবান্ধব কার্যালয়।
২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর মদনেরপাড়া গ্রামে প্রায় আটবিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা এ প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। সেন্টারের ভবনের আয়তন ৩২ হাজার বর্গফুট। ‘আরবান কন্সট্রাকশন’ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডশীপ সেন্টারটি নির্মাণ করে। এতে ব্যয় হয় আনুমানিক আট কোটি টাকা। সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর।
Comments
Thanks for sharing with us.